Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ইঁদুরের মাধ্যমে বসতবাড়ি, গুদামজাত শস্যের ক্ষতি ও জনস্বাস্থ্যে করণীয়

ইঁদুরের মাধ্যমে বসতবাড়ি, গুদামজাত শস্যের ক্ষতি ও জনস্বাস্থ্যে করণীয়
কৃষিবিদ ড. মোঃ শাহ আলম

ইঁদুর জাতীয় প্রাণী হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিকারক প্রাণী যা ফসল বপন থেকে শুরু করে ফসল কাটা ও সংগ্রহ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে ক্ষতি করে থাকে। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য গুদামে সংরক্ষণ করা হয় যেখানে ইঁদুরের ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। ইঁদুর স্তন্যপায়ী, সর্বভুক, নিশাচর প্রাণী। এদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হলেও স্পর্শ, শ্রবণ, ঘ্রাণ ও স্বাদেন্দ্রিয় বেশ প্রখর। ইঁদুর যে কোনো পরিবেশে নিজেকে খাপখাইয়ে খুব দ্রুত বংশবিস্তার করতে সক্ষম। একজোড়া ইঁদুর হতে বছরে চক্রবৃদ্ধি হারে গড়ে প্রায় ২০০০টি পর্যন্ত ইঁদুর জন্মলাভ করতে পারে। ইঁদুর সাধারণত গর্তে বাস করে, তবে কোন কোনো প্রজাতি ঘরে বা গাছেও বাসা তৈরি করতে পারদর্শী। যে কোনো স্থানে একটিমাত্র ইঁদুরের উপস্থিতিও এতটাই ক্ষতিকর যে, এর অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রান্তসীমা হচ্ছে শূন্য। তাছাড়া ইঁদুর জাতীয় প্রাণী বিভিন্ন রোগের বাহক/সংরক্ষক হিসাবেও কাজ করে, যেমন- প্লেগ, মিউরিন টাইফাস, লেপটোস্পারোসিস, ইঁদুর কামড়ানো জ¦র সালমোনেলোসিস ইত্যাদি। আমাদের বসতবাড়ি ও গুদামে যে কয়টি ইঁদুরের প্রজাতি বেশি ক্ষতি করে সেগুলো হলো- মাঠের বড় কালো ইঁদুর বা ধেড়ে ইঁদুর, ঘরের ইঁদুর বা গেছো ইঁদুর গোষ্ঠী, বাত্তি বা সোলই বা ঘরের নেংটি ইঁদুর, বাদামি ইঁদুর অন্যতম।


বসতবাড়ি, ল্যাবরেটরি ও গুদামে ইঁদুর দ্বারা ক্ষতির ধরন
যে সমস্ত প্রাণী বসত বাড়ীতে ও গুদামজাত শস্যের ক্ষতি করে থাকে তাদের মধ্যে  ইঁদুর অন্যতম। আমাদের দেশে যে পরিমান খাদ্য শস্য উৎপন্ন হয়, গোলাজাত করার পরে তার থেকে শতকরা প্রায় ৩ থেকে ৫ ভাগ শস্য এই সম্মিলিত ইঁদুর বাহিনী দ্বারা নষ্ট হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গিয়েছে ইঁদুর দ্বারা সংগ্রহোত্তর ক্ষতির পরিমাণ ২.৫-৩০ শতাংশ। একটি ইঁদুর প্রতিদিন ২৫ গ্রাম এবং একটি নেংটি ইঁদুর ৩-৪ গ্রাম খাবার খায়। ইঁদুর যে পরিমাণ শস্য খায়, তার চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ পর্যন্ত বেশি নষ্ট করে মলমূত্র, পশম ও মাটির সাথে মিশিয়ে যা মানুষের খাবারের অনুপযোগী। একটি ইঁদুর প্রতিদিন ২৫-১৫০টি মল ত্যাগ, ১৫- ২৫ মিলি. প্রস্রাব করে এবং প্রায় ১০০০টি পশম ঝরে যায় যা খাদ্যশস্যের সাথে মিশে শস্য নষ্ট করে। ইঁদুর গুদামে বীজের ভ্রƒণের অংশ খেয়ে ফেলে ফলে বীজের খাদ্যগুন ও অংকুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। গোলা ও বস্তা কেটেও ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রিক তার আসবাবপত্র ইত্যাদি কেটে ক্ষতি করে। নেংটি ইঁদুর বাসা বাড়ী ও ল্যাবরেটরিতে লেপতোষক, বই পুস্তক, কাগজ, ফাইল ইত্যাদি কেটে ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। ঢাকা জেলার সাভারের নামা বাজারের বিভিন্ন মুদির দোকানে জরিপ করে দেখা গেছে ইঁদুর চাল, ডাল, আটা, গম, তরিতরকারি, বস্তাসহ আসবাসপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র কেটে ও খেয়ে ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। যার পরিমাণ বছরে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। গুদামে প্রতি পরিবারে ৪০-৫০ কেজি ধান বৎসরে ক্ষতি করে থাকে এবং এ ক্ষতির পরিমাণ ৭৫,০০০-১,০০,০০০ মেট্রিকটন। গুদাম ঘর কাঁচা হলে এরা গর্ত করে ঘরের দেয়াল ও মেঝে নষ্ট করে।


ইঁদুরে কাটা দানাশস্য বা জিনিসপত্র, মেঝেতে ইঁদুরের পায়ের ছাপ, খোবলানো মেঝের ঝুরঝুরে মাটি, পড়ে থাকা ইঁদুরের মল, কাঠের তাকে বা দেয়ালে তেলতেলে দাগ প্রভৃতি দেখে ইঁদুরের আক্রমণ ও উপস্থিতি বুঝা যায়।


ইঁদুর দমনের জন্য বিভিন্ন কার্যকরী দমন ব্যবস্থা রয়েছে। মূলত দমন পদ্ধতি নির্ভর করে উপস্থিত প্রজাতির ধরন, ক্ষতির মাত্রা ও পরিমাণ, ফসলের অর্থনৈতিক মূল্য, দমনপদ্ধতির সহজপ্রাপ্যতা এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থা সাপেক্ষে। অধিকন্তু, কোন একক পদ্ধতি প্রয়োগ করার চেয়ে যৌথভাবে সমন্বিত বা সুসংহত দমন ব্যবস্থা নিলে অধিক কার্যকরী হয়। স্মর্তব্য যে, আহার, বাসস্থান ও পানি এ তিনের যে কোন একটির অভাব হলে ইঁদুর স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায়। ইঁদুর খাবার না খেয়ে এক সপ্তাহ বাঁচতে পারে কিন্তু পানি ছাড়া তিন দিনের বেশি বাঁচতে পারে না কিন্তু নেংটি ইঁদুর পানি ছাড়া অনেকদিন বাঁচতে পারে।


বসতবাড়ি ও গুদাম ঘরেও ইঁদুর দমন ব্যবস্থাকে প্রধানত দু’ভাবে ভাগ করা যায় অরাসায়নিক বা পরিবেশসম্মত দমন এবং বিষ প্রয়োগ বা রাসায়নিক দমন পদ্ধতি।
ক) অরাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন (
Non-chemical control)
আদিকাল থেকে কোন প্রকার বিষ বা বিষটোপ ছাড়া ইঁদুর দমন প্রচেষ্টা চলে আসছে। যথাসম্ভব পরিবেশসম্মত পদ্ধতিতে দমনব্যবস্থা নেওয়া শ্রেয়।

 

১। পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা (Ecological management)
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা (ঈষবধহষরহবংং/ঐুমরবহব) বজায় রেখে বসতবাড়ি, রান্নাঘর, ভাণ্ডার, খাদ্য গুদাম, বাড়ির আঙিনা উচ্ছিষ্ট খাবার-দাবার, অবাঞ্ছিত আগাছা ও ঝোপ-ঝাড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নির্মূল করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইঁদুরের দ্বারা ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। খড়ের গাদা ও গোলাঘর মাটি হতে ১৮-২৪ ইঞ্চি উঁচুতে মাচা তৈরি করে স্থাপন করলে ইঁদুরের আক্রমণের মাত্রা হ্রাস পায়।


দালানকোঠা, ঘরবাড়ি ও খাদ্যগুদামে দরজা-জানালা, গ্রিল, পাইপের খোলা মুখ ও অন্যান্য ইঁদুর প্রবেশ স্থানের ফাঁক-ফোকরে ধাতব পাত বা তারজালি লাগিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ইঁদুরের অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং চলাচল প্রতিহত করা সম্ভব। পানির ট্যাপের ছিদ্র, ভাঙা ড্রেন সর্বদা মেরামত করতে হবে যাতে ইঁদুরের জন্য পানি সহজলভ্য না হয়। ঘরে ড্রাম, মটকা, টিনের পাত্র ইত্যাদিতে ধান, গম ও অন্যান্য শস্যসামগ্রী সংরক্ষণ করলে ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। সম্ভব হলে শস্যাধারের মেঝে পাকা হওয়া বাঞ্ছনীয়।


২। ভৌত ও যান্ত্রিক দমন (Physical and Mechanical Control)
বসতবাড়িতে ফাঁদ পেতে ইঁদুর ধরা একটি চিরায়ত আদি দমন পদ্ধতি। ফাঁদ ব্যবহার কৌশল ও তা স্থাপনের স্থান নির্ধারণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, অন্যথায় ফাঁদ লাজুকতার (
Trap shyness) সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইঁদুরের আকার আকৃতি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের ফাঁদ ব্যবহার করা সমীচীন। যেমন ঘরের নেংটি ইঁদুর ধরার ফাঁদ দিয়ে বড় আকৃতির মাঠের ধেড়ে কালো ইঁদুর ধরা সম্ভব নয়। এসব ফাঁদ ইঁদুরের চলাচলের পথ বা আনাগোনাবহুল স্থান যথাঃ ঘরের কিনারায়, দেয়ালের পার্শ্বে, মাচায়, চালের উপর বা গর্তের কাছাকাছি স্থাপন করতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ফাঁদে ধৃত ইঁদুর যথাশীঘ্রই সম্ভব সরানো হয় এবং পুরাতন, খারাপ ও মোল্ডযুক্ত টোপ সরিয়ে নতুন টোপ দেওয়া হয়। প্রয়োজনানুযায়ী ফাঁদের সংখ্যা কম হলে সাফল্য হ্রাস পায়। কোন কোন ফাঁদে ইঁদুর ধরা পড়ার সময়ই যাঁতাকলে আটকে মারা যায়। ইঁদুরের ফাঁদ ভীতি কাটানোর জন্য প্রথম ২-৩ দিন এ ফাঁদের মুখ খোলা রেখে স্থাপন করা হয়। ধৃত জীবন্ত ইঁদুর পানিতে ডুবিয়ে মেরে এবং মৃত ইঁদুরসমূহ মাটির গভীরে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।


৩। জৈবিক দমন (Biological control) : কেবল পরিবেশ বিধ্বংসী রাসায়নিক দ্রব্যের সাহায্যে ইঁদুর নিধনযজ্ঞ চালানো সম্ভব নয়। তাই আমাদের দৃষ্টি ফেরাতে হবে পরিবেশবান্ধব জৈবিক দমনের দিকে। পরভোজী প্রাণীর মধ্যে দিবাচর শিকারি পাখি স্তন্যপায়ী প্রাণী সরীসৃপ দৈনিক উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ইঁদুর শিকার করে ইঁদুরের আধিক্য কমায়। আমাদের নিজেদের স্বার্থে এসব ইঁদুরভুক উপকারি প্রাণিকুলের নির্বিচার নিধন বন্ধে ও সংরক্ষণে যথাযথ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।


(খ) রাসায়নিক দমন বা ইঁদুরনাশক দিয়ে দমন
রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র বহু যুগ ধরে রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন চলে আসছে। বিষ ক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে রাসায়নিক পদ্ধতিকে মূলত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। (ক) তীব্র বা তাৎক্ষণিক বিষ (খ) বহুমাত্রা বা দীর্ঘমেয়াদী বিষ। অরাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে, ক্ষেত্রবিশেষে সংখ্যাধিক্য ঘটলে বিষ বা বিষটোপ ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়ে। বিভিন্ন রকমের ইঁদুর নাশক  যেমন : জিংক ফসফাইড, ল্যানির‌্যাট, ক্লের‌্যাট, ব্রমাপয়েন্ট প্রভৃতি বাজারে বিভিন্ন কীটনাশকের দোকানে পাওয়া যায়।

 

বিষ ব্যবহারের নিয়ম
যে সব ঘরে ইঁদুর আছে বলে মনে করেন অথবা নতুন মাটি তোলা গর্তের মুখে, ইঁদুর চলাচলের রাস্তার উপর বিষটো রেখে দিতে হবে। ছোট ঘর হলে ৪/৫ স্থানে এবং বড় ঘর হলে ১৫/২০ স্থানে বিষ রাখা প্রয়োজন। বিষটোপ প্রস্তুত ও ব্যবহারের পর হাত সাবান দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে। বিষটোপ ছোট ছেলে মেয়েদের ও গৃহপালিত পশুর নাগালের বাইরে রাখতে হবে। কখনো বিষ মুখে বা পেটে গেলে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার আসতে দেরী হলে রোগীকে বমি করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সন্ধ্যার সময় বিষটোপ দিতে হবে এবং পরদিন সকালে  সেগুলো আবার তুলে রাখতে হবে। ইঁদুর সম্পূর্ণভাবে দমন বা নির্মূল করা সম্ভব হয় না। তাই এদের সংখ্যা কমিয়ে মূল্যবান খাদ্যশস্য রক্ষা করে খাদ্যাভাব দূর করার চেষ্টা করতে হবে। কোন নির্দিষ্ট একক পদ্ধতি ইঁদুর  দমনের জন্য  যথেষ্ট নয়। ইঁদুর  দমনের সফলতা নির্ভর করে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং বিভিন্ন সময়োপযোগী পদ্ধতি ব্যবহারের উপর। অতএব সম্মিলিত এবং সময়োপযোগী দমন পদ্ধতি প্রয়োগ করলেই বসতবাড়ি ও গুদামে ইঁদুরের উপদ্রব কমানো সম্ভব।

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, অনিষ্টকারী মেরুদণ্ডী প্রাণী বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর। মোবাইল : ০১৯১১৮৫৭৫৮৬,
ই-মেইল : atamvpd@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon